সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির লাশের পুনঃময়নাতদন্ত করে
চিকিৎসক জানিয়েছেন, দেহ অনেকটাই পচে যাওয়ায় সব ঠিকমতো বোঝা যায়নি।
ঢাকা
মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কাজী গোলাম মোখলেসুর রহমান
বৃহস্পতিবার দুপুরে মর্গে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বডি হাইলি ডিকম্পোজড
হয়ে গেছে। পেশি ও চামড়া হাড় থেকে অনেকটাই সরে গেছে। অর্গানগুলোও ঠিকমতো
বোঝা যাচ্ছিল না।”
তারপরও ভিসেরা পরীক্ষার জন্য লাশ থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে এই চিকিৎসক জানান।
গত
১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছারাঙা
টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি।
এর আড়াই মাস পর বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুজ্জামানের
উপস্থিতিতে আজিমপুর গোরস্তান থেকে সাগর-রুনির লাশ তোলা হয় ভিসেরা ও
রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য।
মোখলেসুর রহমান ছাড়াও ফরেনসিক বিভাগের
সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান ও প্রভাষক ডা. পারভেজ ইফতেখার আহম্মেদ
ময়না তদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন।
পুনঃময়নাতদন্তের পর মোখলেসুর
রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “চেতনানাশক বা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি-না, কে
আগে মারা গিয়েছি- এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই কবর থেকে লাশ তোলা হয়।”
কবর
দেওয়ার আড়াই মাস পর পরীক্ষা করে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি বোঝা সম্ভব কি না
জানতে চাইলে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান বলেন, “সাধারণত সব বিষের আলামত এতোদিন
থাকে না। তবে কিছু বিষের নমুনা বহুদিন পর্যন্ত দেহাশেষে থেকে যায়।”
হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা পরীক্ষা বা
নমুনা রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে ডা. মোখলেস জানান, সেই সময় পুলিশের তদন্ত
কর্মকর্তা মৃত্যুর কারণ ও ধরন জানতে চেয়েছিলেন। বিষ প্রয়োগ সম্পর্কিত কোনো
সন্দেহের কথা বলেননি।
“আমাদের তখন বিষ প্রয়োগের সন্দেহের কথা বললে তখন রাসায়নিক পরীক্ষাও করা হতো।”
সাগর-রুনি
হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি
হত্যা মামলা করেন রুনির ভাই। সে অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
কিন্তু
এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং হত্যার কারণ জানতে না পারায় হাই
কোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর সর্বাধুনিক
প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য
র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত
মঙ্গলবার ভিসেরা ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য কবরে থেকে সাগর-রুনির লাশ তোলার
আবেদন করে র্যাব। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহা এ ব্যাপারে
অনুমতি দিলে নির্বাহী হাকিম শহীদুজ্জামানকে লাশ তোলার বিষয়টি তদারক করার
দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সাগরের বোনের স্বামী শাহ মোহাম্মদ শরীফুল
ইসলাম বৃহস্পতিবার মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, “র্যাবের এই লাশ উত্তোলন,
পুনঃময়নাতদন্ত যাতে পুলিশের মতো ব্যর্থ না হয়। আমরা যেন এর ফলাফল পাই।”
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন