রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১২

ডার্বি লড়াই.....




 

৪৪ বছরে ফুটবল ইতিহাসে কত পরিবর্তন ঘটে গেছে। এসেছে পূর্ণ রূপে পেশাদারিত্ব। ইংলিশ ফুটবল লীগ নাম পরিবর্তন হয়ে রূপান্তর ঘটেছে প্রিমিয়ার লীগে। লিভারপুলের দীর্ঘ আধিপত্য খর্ব করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের (ম্যানইউ) উত্থান। এ সময়ের মধ্যে কতকিছু ঘটে গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে। সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনের সে ধারায় আরও একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টির ক্ষণ আজ। ১৯৬৮ সালের পর আবারও ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের মুকুট মাথায় তুলে নিতে প্রস্তুত ম্যানইউর শহর প্রতিবেশী ম্যানচেস্টার সিটি। তবে সিটির সামনে সবচেয়ে বড় বাধাটির নাম এখনও সেই ম্যানইউই। দুই শহর প্রতিদ্বন্দ্বীর ডার্বি ম্যাচে আজই নির্ধারণ হয়ে যেতে পারে এবারের লীগ শিরোপা যাচ্ছে কার ঘরে। ইত্তেহাদ স্টেডিয়ামে আজ রাতেই বসছে ম্যানচেস্টারের দু'দলের লড়াই। ধারণা করা হচ্ছে, এ ডার্বি ম্যাচটি দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী টিভির সামনে বসবে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন (৬৫ কোটি) মানুষ। যা প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসেও একটি রেকর্ড।
ম্যানইউ এবং ম্যানসিটি_ দু'দলের সামনেই নতুন ইতিহাসের হাতছানি। ম্যানসিটির চাইতে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে ম্যানইউ। ইত্তেহাদ স্টেডিয়ামে আজ যদি সিটিকে হারাতে পারে তাহলে প্রথম দল হিসেবে ২০টি ইংলিশ লীগ শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়বে ম্যানইউ। আর যদি হারে, তাহলে ১৯৬৮ সালের পর (৪৪ বছর) এই প্রথম ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জিতবে ম্যানসিটি। শুধু তাই নয়, ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগ নামকরণের পর থেকে এটাই হবে তাদের প্রথম শিরোপা। তবে এ ক্ষেত্রে আরও অপেক্ষা করতে হবে সিটিকে। কারণ ডার্বির পর দু'দলেরই আরও দুটি করে ম্যাচ বাকি থাকবে। ওই দুই ম্যাচে ভালো ব্যবধানে জিততে হবে সিটিকে। বিপরীতে ম্যানইউকে একটি হার কিংবা ড্র করতে হবে, অথবা গোল ব্যবধানে পিছিয়ে যেতে হবে। ম্যানসিটির জন্য সুবিধাজনক দিক হলো, গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে তারাই। একই সঙ্গে দু'দলের হেড টু হেড ব্যবধানেও এগিয়ে ম্যানসিটিই। কারণ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম পর্বের ডার্বিতে ম্যানইউকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ম্যানসিটি। আজ জিতলে তো কথাই নেই।
২০০১-০২ মৌসুমেও দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে খেলেছিল ম্যানসিটি। আজ তারা প্রিমিয়ার লীগ দাবিদার। ২০০৮ সালে আবুধাবিভিত্তিক আরব আমিরাতের ধনকুবের শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান কিনে নেওয়ার পরই পরিবর্তন শুরু হয় ম্যানচেস্টারের এ ক্লাবটির। সে থেকে এবার নিয়ে তিন মৌসুমে উড়েই চলছে ম্যানইউর প্রতিবেশীরা। গত মৌসুমে সিটির অবস্থান ছিল তৃতীয়। চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে শিরোপা নিশ্চিতই হয়ে যেত। যদি মাঝে কয়েকটা ম্যাচে হোঁচট না খেত তারা। সান্দারল্যান্ড, স্টোক সিটির সঙ্গে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে যায় তারা। সিটি কোচ রবার্তো মানচিনি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু উইগান অ্যাথলেটিকের কাছে হার এবং এভারটনের সঙ্গে ড্র করে ম্যানইউই শিরোপা লড়াইটা জমিয়ে তোলে। ৩ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে আজ শিরোপার জন্যই তারা মুখোমুখি হবে শহর প্রতিদ্বন্দ্বীর। ১৯৬৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন একটি ডার্বি ম্যাচ। লীগের ১০ ম্যাচ বাকি থাকতে ওই ডার্বিটি শিরোপা নির্ধারণী না হলেও তা ছিল দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থানে ওঠার লড়াই। ম্যানইউকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছিল ম্যানসিটিই। শেষ পর্যন্ত তারাই হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন।
গত সপ্তাহে এভারটনের সঙ্গে ম্যানইউর ৪-৪ গোলে ড্র করার পর থেকেই আজকের ডার্বিকে বলা হচ্ছে, 'মাদার অব অল ডার্বি।' কোচ স্যার আলেক্স ফার্গুসন তখনই বলেছিলেন, 'আমার কোচিং ক্যারিয়ারে সম্ভবত এটাই হচ্ছে কঠিন ডার্বি।' তিনিই আজকের ডার্বিকে মাদার অব অল ডার্বি বলে উল্লেখ করেন, 'এটা সমর্থকদের রক্তের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমি মনে করি, প্রচুর ভক্ত-দর্শক এ ম্যাচ ঘিরে প্রচণ্ড উত্তেজনায় ভুগছে। আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করব এ ম্যাচটি জয়ের জন্য।' ম্যানসিটি মিডফিল্ডার গ্যারেথ ব্যারিও বললেন প্রায় একই কথা, 'মানুষ বলাবলি শুরু করেছে, প্রিমিয়ার লীগ ইতিহাসে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ। তবে এত বড় ম্যাচ কিংবা ম্যানইউর মতো দলের বিপক্ষে খেলার চাপ নিয়ে আমি চিন্তিত নই।'

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন