রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

হরতালে স্থবির সারা দেশ.....

  • সিলেট মহানগরে গতকাল হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। জিন্দাবাজার এলাকা থেকে �
    সিলেট মহানগরে গতকাল হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে। জিন্দাবাজার এলাকা থেকে ছবিটি তোলা
    প্রথম আলো
  • হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই ছাত্রদলকর্মীর একজনকে খুলনা সদর থানার দ� হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই ছাত্রদলকর্মীর একজনকে খুলনা সদর থানার দোতলার একটি কক্ষে ঝুলিয়ে নির্যাতন করছে পুলিশ। ডানে চোখ বাঁধা আরেক কর্মী
    ছবি: প্রথম আলো
1 2
  • বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।
    ঢাকায় হরতাল-সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল ফাটিয়েছে। পুলিশ হরতাল-সমর্থকদের রাস্তায় দেখামাত্র লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। কয়েকটি স্থানে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে।
    সিলেট ছাড়া আর কোথাও বড় ধরনের গোলাযোগ হয়নি। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ ৪০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হরতাল-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। সাভারে হরতালকারীদের ধাওয়া খেয়ে একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারায়। গাড়িটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে চালক নিহত হন।
    এ সরকারের আমলে অন্যান্য হরতালের তুলনায় গতকালের হরতালে রাজধানীতে যান চলাচল ছিল অনেক কম। কিছু কিছু সড়কে অল্পসংখ্যক বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। বরাবরের মতো এই হরতালেও নগরের প্রধান সড়কগুলো ছিল রিকশার দখলে। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে রেল, লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। বেশির ভাগ দোকানপাট খোলেনি। ফলে জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।
    বিএনপি অভিযোগ করেছে, হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া অনেকে পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন।
    পুলিশের হিসাবে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০১ জনকে এবং ঢাকার বাইরের অন্যান্য জেলা থেকে ১০৮ জনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, হরতাল চলাকালে রাজধানীতে আটক করা হয়েছে ৩১ জনকে। এ ছাড়া ঢাকায় ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় ছিলেন। তবে ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাউকে শাস্তি দেননি।
    বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদ এবং তাঁকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে এই হরতাল ডাকা হয়। হরতালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটসহ আরও কয়েকটি দলের সমর্থন ছিল। বিএনপির অভিযোগ, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর রাস্তা থেকে সরকারের লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গুম করেছে। গতকাল পর্যন্ত তাঁর খোঁজ না মেলায় আজ সোমবারও সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
    বিএনপি কার্যালয় অবরুদ্ধ: আর্মার্ড কার, জলকামান, প্রিজন ভ্যান নিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভোর থেকে অবরুদ্ধ করে রাখে। নেতা-কর্মীদের কার্যালয়ের আশপাশে ভিড়তে দেওয়া হয়নি। সারা দিন কার্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ থাকেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। দুপুরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাও সেখানে যান।
    ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে বেলা পৌনে ১১টার দিকে একটি মিছিল ফকিরাপুল কাঁচাবাজারের কাছে এলে পর পর চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কাউকে পায়নি। এ ঘটনায় একজন আহত হন।
    পুলিশ দাবি করেছে, ছাত্রদলের মিছিল থেকে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ছাত্রদলের একজন নেতা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা তাঁদের মিছিলে আক্রমণ করেছে।
    সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকে ভাসানী ভবনের পাশের গলি থেকে হরতালবিরোধী একটি ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপির কার্যালয়। মিছিলের আওয়াজ শুনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ ও আশপাশে থাকা র‌্যাবের সদস্যরা তৎপর হন। কিন্তু ছাত্রলীগের ব্যানার দেখার পর র‌্যাব-পুলিশ সরে দাঁড়ায়।
    সংসদ ভবন এলাকা: হরতাল চলাকালে সংসদ এলাকায় মিছিল করতে পারেননি বিএনপির সাংসদেরা। সকাল নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সংসদ ভবনের টানেলের পশ্চিম পাশের প্রবেশপথ থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁরা টানেলের পূর্ব প্রান্তের সড়কে সমাবেশ করেন।
    সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংসদ এম কে আনোয়ার, মাহবুবউদ্দিন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মজিবর রহমান সরোয়ার, হাফিজুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দা আসিফা আশরাফি, নিলোফার বেগম, রাশেদা বেগম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তাঁরা সংসদ ভবনের ভেতরে যান।
    সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। এ জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের গুম করা হচ্ছে।
    ফার্মগেটে দিনভর ছিল প্রচুর নিত্যযাত্রী ও রিকশা-ভ্যানের জটলা।
    ওয়ারী: ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডে সাবেক কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ সেখান থেকে আবুল বাশারসহ ১২ জনকে আটক করে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
    জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: সকালে হরতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমানসহ সংগঠনের ২৮ নেতা-কর্মীকে জজকোর্ট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। ছাত্রদল দাবি করছে, তাঁদের পুলিশ অকারণে আটক করেছে। তাঁরা জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। কোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে তাঁরা জড়াননি।
    অবশ্য কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক জহির রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, যাচাই-বাছাইয়ে নিরপরাধ প্রমাণিত হলে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
    মহাখালীতে লেগুনায় আগুন: বেলা ১১টার দিকে মহাখালীর আমতলী মোড়ে মিরপুর থেকে মহাখালীগামী একটি লেগুনায় (হিউম্যান হলার) আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল-সমর্থকেরা। পুলিশ সেখান থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে। এর পরপরই মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসা থেকে ১০-১২ জন নেতা-কর্মী নিয়ে বের হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। তাঁরা আমতলী মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। হান্নান শাহ পুলিশকে বলেন, তাঁরা ইলিয়াস আলীর বাড়ি যাচ্ছেন। তখন পুলিশি পাহারায় তাঁদের বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বের হয়ে হান্নান শাহ নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীকে অনতিবিলম্বে ফেরত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর পুলিশ প্রহরায় তাঁকে আবার ডিওএইচএস এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
    এর আগে সকালে বিএনপির সহসভাপতি সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে মহাখালী-গুলশান সড়কে ১০-১২ জন মহিলা কর্মী একটি মিছিল বের করেন। পুলিশ দেখে মিছিলকারীরা ব্র্যাক সেন্টারে ঢুকে পড়েন। এ ছাড়া সকাল ১০টায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশের একটি গলি থেকে কিছু যুবক রাস্তায় ইটপাটকেল ছুড়ে পালিয়ে যায়।
    মিরপুর: মিরপুর ১ ও ১২ নম্বর থেকে গুলিস্তান ও উত্তরার গন্তব্যে কিছু বাস চলাচল করেছে। ১১টা পর্যন্ত মিরপুর ১ ও ১০ নম্বরে এবং গাবতলী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল করে। তবে হরতালের সমর্থনে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
    মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি: বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা কলেজের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁদের বাধার মুখে প্রায় আধঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তায় দুপুরের পরপর যান চলাচল বাড়তে থাকে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে লালবাগ থেকে হরতালবিরোধী এক মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ।
    ছিল না শরিকদের তৎপরতা: গতকালের হরতালে ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের রাজপথে দেখা যায়নি। তবে জাতীয় সংসদ ভবন প্লাজায় অনুষ্ঠিত বিএনপির সাংসদদের বিক্ষোভ মিছিলে জামায়াতের সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ উপস্থিত ছিলেন।
    হরতালে জামায়াত-শিবিরকে মাঠে দেখা না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনা করে হরতালে অংশ নিয়েছি। তাতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা হয়েছে।’
    রাতে দুটি বাসে আগুন: ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নর্দ্দা এলাকায় থামানো একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। মডার্ন এন্টারপ্রাইজের ওই বাসটি ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পথে চলাচল করত। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
    রাত সাড়ে ১২টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন